নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ প্রজনন মৌসুমে ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানের দ্বিতীয় দিনে বরিশাল অঞ্চলে তিন কোটি ৯০ লাখ টাকার অবৈধ জাল ও মাছ উদ্ধার করেছে নৌ-পুলিশ। একই সাথে একটি ড্রেজার, চারটি নৌযান জব্দ করা হয়। গ্রেফতার হয়েছে ১৫ জন মাছ শিকারী। আজ (১৬ অক্টোবর) শুক্রবার সকালে নৌ-পুলিশ বরিশাল অঞ্চলের পুলিশ পরিদর্শক আবু তাহের এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, জব্দকৃত মাছ এতিমখানায় এবং উদ্ধারকৃত জাল ভ্রাম্যমান আদালতের অনুমতিক্রমে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।
এই কর্মকর্তা বলেন, ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানে পেশাদার জেলেদের চেয়ে মৌসুমী জেলেরা বেশি ধরা পরে। কারন এই সময়ে সরকারী প্রনোদনা পেয়ে পেশাদার জেলেরা মাছ শিকারে বিরত থাকলেও মৌসুমী কিছু মানুষ লোভে পরে ইলিশ সম্পদ ধ্বংস করতে নামেন। নৌ-পুলিশ জানিয়েছে, নৌ-পুলিশ বরিশাল অঞ্চলের ১৫টি পুলিশ স্টেশনের মধ্যে ১২ টি স্টেশনের অভিযানে উল্লেখিত মাছ, নৌ-যান, জাল ও জেলে আটক করা হয়েছে। তিনটি পুলিশ স্টেশনের অভিযানে আটক বা জব্দ কিছুই নেই। সেই তিনটি পুলিশ ফাঁড়ি হচ্ছে, পটুয়াখালীর দশমিনা, কুয়াকাটা এবং বরগুনা জেলার নিদ্রাসখিনা পুলিশ ইউনিট। এরমধ্যে বরিশাল সদর নৌ থানার অভিযানে এক লাখ ৭৫ হাজার বর্গমিটার জাল উদ্ধার করা হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য সাড়ে দশ লাখ টাকা। জব্দকৃত জাল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। জেলার নাজিরপুর নৌ-থানার অভিযানে দুই লাখ ৭৫ হাজার বর্গমিটার জাল উদ্ধার করা হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য সাড়ে ১৬ লাখ টাকা। জব্দকৃত জাল পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই অভিযানে আড়াই হাজার টাকার মাছ জব্দ হয়, যা এতিমখানায় দিয়ে দিয়েছে উপজেলা নির্বাহী অফিসার। হিজলা নৌ-থানার অভিযানে চার লাখ বর্গমিটার জাল উদ্ধার করা হয়েছে। যার মূল্য প্রায় ২৪ লাখ টাকা।
কালীগঞ্জ নৌ-থানার অভিযানে সাড়ে দশ লাখ বর্গমিটার কারেন্ট জাল, যার মূল্য ৬৩ লাখ টাকা এবং দশ লাখ ২৫ হাজার বর্গমিটার সুতার জাল; যার মূল্য ৭১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা প্রায়। ওই অভিযানে একটি ড্রেজার, দুটি নৌকা জব্দ করা হয়। উদ্ধার করা হয় দশ হাজার টাকা মূল্যের ২০ কেজি মাছ। এসময়ে ৮ জনকে আটক করে পুলিশ। যারমধ্যে প্রাপ্ত বয়স্ক ৫ জনকে একমাসের কারাদন্ড ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক তিনজনকে তিন হাজার টাকা করে জরিমানা করেন সংশ্লিষ্ট উপজেলা মেহেন্দীগঞ্জের ইউএনও পিজুস চন্দ্র দে। অভিযানে একটি নৌকার তলা ছিদ্র করে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। বাকেরগঞ্জ উপজেলার চামটা নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির অভিযানে দুই লাখ বর্গমিটার জাল জব্দ করা হয়। যার মূল্য ১২ লাখ টাকার মত। ভোলা জেলার পূর্ব ইলিশা নৌ-থানার অভিযানে তিন লাখ ৭৫ হাজার বর্গমিটার কারেন্ট জাল, যার মূল্য আনুমানিক ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং ১৫ হাজার বর্গমিটার সুতার জাল; যার মূল্য আনুমানিক এক লাখ ৩৫ হাজার টাকা। জব্দ করা হয় একটি ট্রলার এবং দেড় হাজার টাকা মূল্যের ৫ কেজি ইলিশ। এই অভিযানে গ্রেফতার করা হয় তিনজনকে। যাদের প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা করে সর্বমোট ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভোলা সদরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মিজানুর রহমান। এই সময়ে একটি ট্রলার নদীতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়।
ওই জেলার মির্জাকালু নৌ-ফাঁড়ির অভিযানে ৬ লাখ বর্গমিটার জাল উদ্ধার করা হয়েছে। যার মূল্য আনুমানিক ৩৬ লাখ টাকা। জব্দ করা হয়েছে পাঁচ হাজার টাকার মাছ। পটুয়াখালী জেলার পায়রাকুঞ্জ নৌ-পুলিশ ইউনিটের অভিযানে ৩ লাখ ৩৫ হাজার বর্গমিটার কারেন্ট জাল, দুই লাখ বর্গমিটার সুতার জাল এবং দেড় লাখ মিটার চরঘেরা জাল জব্দ করা হয়। যার মূল্য ৪৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রায়। এসময়ে একটি ট্রলার ও দশ কেজি মাছ উদ্ধার করা হয়। ওই অভিযানে চারজন গ্রেফতার হন। যার মধ্যে তিনজনকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা এবং একজনকে এক বছরের সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন পটুয়াখালী সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার জাকির হোসেন।
একই জেলার কালাইয়া নৌ-পুলিশ ইউনিটের অভিযানে অভিযানে ৫ লাখ বর্গমিটার কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়। যার মূল্য ৩০ লাখ টাকা প্রায়। জেলার পায়রাবন্দর নৌ-পুলিশ ইউনিটের অভিযানে ৪০ কেজি মাছ উদ্ধার করা হয়েছে। যারমূল্য ২০ হাজার টাকা। বরগুনা জেলার কাকচিড়া নৌ-পুলিশ ইউনিটের অভিযানে অভিযানে তিন লাখ বর্গমিটার কারেন্ট জাল ও দুই লাখ ৫০ হাজার বর্গমিটার চরঘেরা জাল জব্দ করা হয়। যার মূল্য ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা প্রায়। ওই জেলার চরদুয়ানী নৌ-পুলিশ ইউনিটের অভিযানে অভিযানে এক লাখ বর্গমিটার কারেন্ট জাল, এক লাখ বর্গমিটার সুতার জাল এবং ২৫ হাজার বর্গমিটার চরঘেরা জাল জব্দ করা হয়। যার মূল্য ১৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা প্রায়। অভিযানে জব্দকৃত জাল সংশ্লিষ্ট উপজেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও মৎস কর্মকর্তার উপস্থিতিতে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।
নৌযান জব্দ করা হয়েছে এবং আটককৃতদের অপরাধের মাত্রা অনুসারে হয়তো কারও বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে আবার অনেককে ভ্রাম্যমান আদালতে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নৌ-পুলিশ বরিশাল অঞ্চলের পুলিশ সুপার কফিল উদ্দিন। তিনি বলেন, ইলিশ শিকার বন্ধে আরও বৃহত্তর অভিযান পরিচালনা করা হবে। প্রসঙ্গত, ১৪ অক্টোবর থেকে ২২ দিনের প্রজনন মৌসুমের ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান শুরু হয়। যা শেষ হবে আগামী ৪ নভেম্বর রাত ১২ টায়। এই সময়ের মধ্যে নদীতে মাছ শিকার, ইলিশ বিপনন ও সংরক্ষণ আইনত দন্ডনীয়।
Leave a Reply